বিশেষ প্রতিবেদন :
কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি আবারও একক সংগঠনে পরিনত হতে চলছে। ইউনিয়নব্যাপী নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিল শেষ হয়।এর মাধ্যমে ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এখন ইউনিয়ন সম্মেলনের প্রতীক্ষায় দলীয় নেতাকর্মীরা।
কুলাউড়া উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্য যে ৪-৫ টি ইউনিয়নে বিএনপির একক আধিপত্য এসব ইউনিয়নের একটি হাজীপুর ইউনিয়ন। এখানে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। ১৯৯৬ সাল থেকে হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি একক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিশেষ করে বিএনপি ও সমমনা প্রার্থীরা ২০০১ সালের পর থেকে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনে হাজীপুর ইউনিয়নে দাপটের সাথে রাজনীতি ও নির্বাচন করে আসছেন।
বিএনপির দলীয় সুত্র জানায়, দলের নির্বাচিত রাস্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর দেশের অন্য এলাকার মতো হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপিতে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দেয়। হালুয়া রুটির আশায় অনেকেই বিএনপি ছেড়ে ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। বিএনপির ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুবিধাভোগী ওই শ্রেণী দলীয় প্রার্থী এডভোকেট আতাউর রহমানের পক্ষে প্রচারণা না করে পতিত স্বৈরাচার এরশাদের প্রার্থী নবাব আলী আববাস খানের পক্ষে প্রচারণা চালনায়। কি আদর্শিক নেতারা দলত্যাগ করেননি। বিশেষ করে প্রয়াত বিএনপি সভাপতি ফজলুর রহমান, সিনিয়র বিএনপি নেতা ছয়েফ উদ্দিন, যুবদলের প্রথম সভাপতি মো. তাহির উদ্দিন, প্রয়াত লুতফুর রহমান, প্রয়াত আব্দুল মালিক লুকু,প্রয়াত হাজী আকবর আলী, প্রয়াত শেখ অনু মিয়া, শেখ আব্দুর রহমান, মো.আপ্তাব আলী মেম্বার, মো. গউছ উদ্দিন এমন অসংখ্য নেতাকর্মী ক্ষমতার স্রোতে গা ভাসাননি। ফলে দুর্যোগ কাটিয়ে নব্বইয়ের পর হাজীপুর ইউনিয়নে ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, নব্বই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পর নিজ এলাকায় এসে প্রফেসর আশফাকুর রহমান তোফায়েল, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু, জাকারিয়া আহমেদ, এডভোকেট আব্দুল মতলিব, হারুনুর রশীদ, আকিকুর রাজা জয়নাল সহ বিপুল সংখ্যক ছাত্রদলের নেতাকর্মী হাজীপুর ইউনিয়নে সংগঠন গোছাতে শুরু করেন। এসময় ন্যাপ ভাসানীর মো. মন্তাজ আলী, ইসলামিক ফ্রন্টের ক্কারী মশহুর আহমেদ, মুসলিম লীগের প্রয়াত নওয়াব আলী, জাসদের ইয়াকুব আলী মেম্বার সহ বিভিন্ন দল থেকে আরও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগ দেন। ফলে হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি একক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকশ করে।
২০০৩ সালে হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি থেকে প্রথম বারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল বাছিত বাচ্চু। ওই নির্বাচনে তিনি সামন্য ভোটের জন্য পরাজিত হলেও হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপির রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সুচনা করে । পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক মেম্বার মাহমুদ আলী, আব্দুল মনাফ চৌধুরীসহ আরও বিপুল সংখ্যক জাপা নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে বিএনপির আব্দুল বাছিত বাচ্চু ও মাহমুদ আলী দু'জনই হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। ২০১১ সালে মো. মাহমুদ আলী এবং ২০১৬ সালে আব্দুল বাছিত বাচ্চু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১১ থেকে প্রতিটি ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের বাক্সে ৮-৯ হাজার করে ভোট পড়ে। এমনকি ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যাপক ভোট কারচুপির পরও বিএনপির প্রার্থীরা ৮ হাজারের মতো ভোট পান।
বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিএনপি দেশের অন্য এলাকার মতো হাজীপুর ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে পারেনি। বিএনপির শীর্ষ নেতা প্রয়াত মাহমুদ আলী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু, ইয়াকুব আলী মেম্বার, ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান হেলাল, ফারুক আহমেদ পান্না, ছাত্রদলের এম পাভেল আহমেদ, মোশাররফ হোসেন মিজু, আজিজুর রহমান আজিজ সহ অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। এমনকি কারাগারে হাইকোর্টে যেতে হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আবার বিএনপিতে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ৯ টি ওয়ার্ডে শেষ হওয়া সম্মেলনে তা উপলব্ধি করা গেছে। তবে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরেরা আওয়ামী ঘরনার কিছু নেতার ব্যক্তিস্বার্থে বিএনপিতে ঢুকে পড়ছে। এতে দলের মধ্যে কী প্রভাব নিয়ে আসে তা দেখার অপেক্ষা!
(আসছে ইউপি কাউন্সিল ও কর্মীদের প্রত্যাশা)
সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দুল বাছিত বাচ্চু
বার্তা সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয় :
২৭ শাহ মোস্তফা রোড, মৌলভীবাজার -৩২০০
সেলফোন : ০১৭১২১৮২২৯৬ (𝐖𝐡𝐚𝐭𝐬𝐀𝐩𝐩) ০১৫৫৩৪৫৬৬৯৫
ই -মেইল : 𝐛𝐚𝐜𝐡𝐜𝐡𝐮.𝐬𝐲𝐥@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
𝐟𝐛: 𝐀𝐛𝐝𝐮𝐥 𝐁𝐚𝐬𝐢𝐭 𝐁𝐚𝐜𝐡𝐜𝐡𝐮
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত