বিশেষ প্রতিনিধি :
"বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ঘিরে হাজীপুর ইউনিয়নব্যাপী উৎসবের আমেজ। উৎসবমুখর পুরো হাজীপুর ইউনিয়নের ৪২টি গ্রাম। সর্বত্র সাঁজ সাঁজ রব। যেনো ঘুম নিদ্রা ভুলে গেছেন নেতাকর্মীরা। সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই ৩ পদের ৯ জন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকেরা প্রতিদিন রাত অবধি কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তাদের সমর্থন আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আগামী ২ জুন সোমবার হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির এই সম্মেলন ও কাউন্সিল। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হবে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন।পরে কাউন্সিল শুরু হবে বেলা আড়াইটায়। বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত তা চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বাবু বিধান চন্দ্র দে।
তিনি জানান বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি এম নাসের রহমানসহ জেলা ও উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন।
হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বিধান চন্দ্র দে মৌলভীবাজার নিউজকে জানান, ২ জুন সোমবার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হবে হাজীপুর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। পরে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলে ৪ শ' ৫৯ জন ভোটার আগামী দুই বাছরের জন্য দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।বিএনপির দলীয় সুত্রে জানা গেছে, সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই ৩ টি পদে প্রার্থী হয়েছেন মোট ৯ জন।
সভাপতি পদে হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাংশের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেম্বার ইয়াকুব আলী এবং অপর অংশের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ পান্ন।
সাধারণ সম্পাদক পদে একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান হেলাল, অপর অংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবেদ আলম ও সাবেক জাসাস সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান রুমেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়জুর রহমান, সাবেক যুবদল নেতা আহরারুজ্জান আকরার, সিনিয়র বিএনপি নেতা মুহিত মিয়া ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ইলিয়াছুর রহমান।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি একক বৃহৎ সংগঠন ছিলো। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপির তখনকার সাধারণ সম্পাদক এম এম শাহীন ৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এসময় বিএনপির ৯৯ শতাংশ নেতাকর্মী এম এম শাহীনের পক্ষে চলে যাওয়ায় সাবেক সচিব এই কে মোফাজ্জল করিম ও অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান জেলার নির্দেশে কুলাউড়া উপজেলা এবং হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করেন। ফারুক আহমেদ পান্নাকে সভাপতি এবং মরহুম সুলতান উদ্দিন আহমেদ কে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান উদ্দিন আহমেদ সরাসরি খেলাফত মজলিসের রাজনীতি করতেন।।তবে ফারুক আহমেদ পান্না জামায়াতে ইসলামী না খেলাফত মজলিস করতেন নেতাকর্মীদের কাছে তা পুরোপুরি স্পষ্ট না।
বিএনপির তখনকার সাধারণ সম্পাদক এম এম শাহীন এমপি নির্বাচিত হয়ে নিজ বলয়ে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখেন। আবার এ এইচ মোফাজ্জল করিম এবং প্রফেসর আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে অপর গ্রুপ তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তাদের নেতৃত্বে পৃথকভাবে ভিন্নধারায় দীর্ঘদিন হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপির রাজনীতি চলছিলো।
বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে সাবেক এমপি এম এম শাহীন বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে কুলাউড়া আসনে নির্বাচন করলে দলের কিছু নেতাকর্মী তার পক্ষে অবস্থান নেয়।। তবে বিএনপির বেশীরভাগ নেতাকর্মী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মনসুর কে বিজয়ী করেন। এসময় বিএনপিতে একধরনের ঐক্য ফিরে আসে। কিন্তু কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান এর সাথে এডভোকেট আবেদ রাজা ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত কমিটির বিরোধ দেখা দিলে আবারও বিভাজন দেখা দেয়। তখন ২০২৩ সালে ফারুক আহমেদ পান্না কে সভাপতি এবং জুবেদ আলম কে সাধারণ সম্পাদক করে এম নাসের রহমান গ্রুপের কমিটি করা হয়। অপরদিকে ইয়াকুব আলীকে সভাপতি এবং মনিরুজ্জামান হেলালকে সাধারণ সম্পাদক করে এডভোকেট আবেদ রাজা ও মিজানুর রহমান মিজান গ্রুপের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে এম এম শাহীন তৃণমূল বিএনপি থেকে পাট মার্কায় প্রার্থী হলে বিএনপির ক্ষুদ্র একটি অংশ এম এম শাহীনের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে দল থেকে বাদ পড়েন। বাকিরা আলাদা আলাদা বলয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
বিএনপির দলীয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পালিয়ে গেলে বিএনপিকে আবারও এক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কেন্দ্র থেকে জেলা এবং উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীকে নিয়ে হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটি করা হয়।
উক্ত কমিটির আহবায়ক করা হয় সিনিয়র বিএনপি নেতা খোরশেদ আলী চৌধুরীকে। আর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করা হয় সিনিয়র বিএনপি নেতা বাবু বিধান চন্দ্র দে কে। উক্ত কমিটি ইতোমধ্যে ৯ টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করেছে। এখন করা হয়েছে সম্মেলনের আয়োজন।
বিএনপির অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে ৩ টি পদের ৯ প্রার্থীকে নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ ও আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সভাপতি পদে দুই প্রার্থীর কেউ ছাত্রদল যুবদলের রাজনীতিনা করার বিষয়টি আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ফারুক আহমেদ পান্না ও ইয়াকুব আলী তারা অন্য দল থেকে সরাসরি বিএনপিতে যোগ দিয়ে নেতৃত্ব পেয়েছেন।
বিএনপির তৃনমুল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি পদের প্রার্থী ইয়াকুব আলী এক সময় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ) ও ফারুক আহমেদ পান্না জামায়াতে ইসলামী বা খেলাফত মজলিসের রাজনীতি করতেন। ইয়াকুব আলী নব্বুইয়ের দশকে এবং ফারুক আহমেদ পান্না ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন।
কাউন্সিলরদের কয়েকজন জানান, যেহেতু এখানে দুই প্রার্থী এক সময় অন্য দলে ছিলেন। এখন বিএনপিতে আছেন। তাই ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করে ভোট দিতে হবে। বিশেষ করে বিগত দিনে দলের জন্য তাদের ত্যাগ তিতিক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে ভোট দিতে হবে।
হাজীপুর ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী জীবনের শেষ কাউন্সিলে ফারুক আহমেদ পান্নার সাথে সভাপতি পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে সমান ভোট পেয়েছিলেন। আসন্ন কাউন্সিলে প্রয়াত মাহমুদ আলীর বিপুল সংখ্যক সমর্থক সভাপতি প্রার্থী ইয়াকুব আলীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা যায় মাহমুদ আলীর ছায়ার সাথে লড়ছেন তরুণ বিএনপি নেতা ফারুক আহমেদ পান্না। তাই তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন আভাস দিলেন দলের নেতাকর্মীরা।
একইভাবে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দুল বাছিত বাচ্চু
বার্তা সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয় :
২৭ শাহ মোস্তফা রোড, মৌলভীবাজার -৩২০০
সেলফোন : ০১৭১২১৮২২৯৬ (𝐖𝐡𝐚𝐭𝐬𝐀𝐩𝐩) ০১৫৫৩৪৫৬৬৯৫
ই -মেইল : 𝐛𝐚𝐜𝐡𝐜𝐡𝐮.𝐬𝐲𝐥@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
𝐟𝐛: 𝐀𝐛𝐝𝐮𝐥 𝐁𝐚𝐬𝐢𝐭 𝐁𝐚𝐜𝐡𝐜𝐡𝐮
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত