বিশেষ প্রতিনিধি :
একজন বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতা।অপরজন জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য। এমনকি শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান / মেয়র। দুজন আবার ধনাঢ্য শিল্পপতি। তারা হলেন হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) ও মহসিন মিয়া মধু। মৌলভীবাজার -৪ ( কমলগঞ্জ – শ্রীমঙ্গল) নির্বাচনী এলাকা থেকে অতীতে দু”জনই বিএনপির হয়ে জাতীয় নির্বাচন করেছেন। মহসিন মিয়া মধু ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। হাজী মুজিব ২০০৮ ও ২০১৮ সালে। এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে ওই আসনে এখন চলছে সরগরম আগাম নির্বাচনী হাওয়া। প্রতিদিন করছেন সভাসমাবেশ মতবিনিময় মিছিল মিটিং। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কারও মনে হবে হয়তো এ মাসেই নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী?
কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়ন এবং ২ টি পৌরসভা নিয়ে মৌলভীবাজার-৪ আসন গঠিত। এখানের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখের উপরে। বিগত ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ( ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতিত) এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ গ্রহণ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সরকারি সিদ্ধান্তে দলটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় এই আসনে এখন মুল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জামায়েত সহ অন্যান্য ছোট দলগুলো।এই অবস্থায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে হাজী মুজিব ও মহসিন মিয়া মধুর মধ্যে একধরনের টানাহেঁচড়া চলছে।
মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৫ বারের সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু প্রত্যেকেই শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। পাশাপাশি তারা একে অপরকে আওয়ামী লীগের ‘ধুসর’ হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী বৃহস্পতিবার (১২ জুন) আনুমানিক ১১ টায় মোবাইল ফোনে ‘মৌলভীবাজার নিউজ’কে বলেন, আমি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার -৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। ২০১৮ সালের পর এমন কোনো কাজ করিনি যে কারণে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে না।
হাজী মুজিব বলেন, মহসিন মিয়া মধু আওয়ামী লীগের ‘ধুসর’। বিগত সময়ে এলাকার এমপি আব্দুস শহীদের যোগসাজশে আমাদেরকে অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বিগত ১৫ বছর আমাদের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দলীয় কার্যক্রম করতে দেয়নি। এখন দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
বিএনপির বর্তমান উপজেলা ও পৌর আহবায়ক কমিটিগুলো কার পক্ষে এমন প্রশ্নের জবাবে হাজী মুজিব বলেন, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৪ টি কমিটির আহবায়ক সহ অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ আমার পক্ষে। তবে আমার মতের বাইরে আওয়ামী লীগের কিছু ‘ধুসর’কে কমিটিতে স্থান দেওয়ায় এরা আমার বিরোধিতা করছে।
বিএনপি মৌলভীবাজার জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য মহসিন মিয়া মধু হাজী মুজিবের এসব অভিযোগ খন্ডণ করে বলেন আমি শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র ছিলাম। এটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এমপি মন্ত্রী আসবেন এটা স্বাভাবিক। হাজী মুজিব আমাকে আওয়ামী লীগের ধুরস বলার কোনো যুক্তি নেই এটা প্রতিহিংসা।বরং তিনি নেজে আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক। বিএনপিতে আমার রাজনৈতিক বয়স ৫০ বছর। আর তিনি আওয়ামী লীগের এমপির ভাতিজা। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা ইউসুফ আলীর পালিত।
মহসিন মিয়া মধু বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে আমরা শ্রীমঙ্গলে ব্যবসা বানিজ্য করছি। আমার বাপ দাদা শ্রীমঙ্গলের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। হাজী মুজিবের ব্যবসা বানিজ্য কী? তিনি একজন সোনা চোরাচালানী। এখন সোনা চোরাচালান আর ব্যক্তিগত মামলামোকদ্দমাকে এখন রাজনৈতিক বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
মহসিন মিয়া মধু মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাছাই করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন। যেকারণে আমার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।