আব্দুল বাছিত বাচ্চু
আমার প্রশ্ন একজন ভালো মানুষ হিসেবে শোয়েব কী ছাত্রলীগের ওইসব কর্মসূচি বর্জন করেছিলো? এই সব অন্যায় দেখে দেশের অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আমাদের কুলাউড়ায়ও ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলো। আমাদের শোয়েব কী ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলো?
আজ আমরা যেভাবে শোয়েবকে গ্রেফতারের নিন্দা করছি শোয়েব কী আবু সাঈদ ওয়াসিম মীর মুগ্ধ ফারহান ফাইয়াজ তাহমিদ ভুইয়ার মতো নিরীহ ছাত্রজনতাকে হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলো?
কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাহিদুল ইসলাম শোয়েবকে বুধবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এনিয়ে গত কয়েক ঘন্টা যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মতামত লক্ষ্য করছি। বেশীরভাগের মত শোয়েব একজন ভালো মানুষ। আমার জানা মতেও সে অত্যন্ত ভদ্র। পুলিশ তাকে কেনো গ্রেফতার করেছে সেটা তারা ভালো বলতে পারবে। কিন্তু আমার মতে সমস্যা অন্য জায়গায়। আমি মনে করি আজকের এই পরিস্থিতির জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এককভাবে দায়ী। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের সহযোগিতায় ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের কাধে ভর করে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিগত ১৭ এদেশটা নিজের পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমিদারি মনে করতেন। নিজের দলের কিছু টাউট বাটপার ছাড়া অনেক ভালো আওয়ামী লীগ নেতাদেরও তিনি তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে কোনটাসা করে রেখেছিলেন। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ সহ নিজ দলের অনেক বরেণ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধ্বংস করে গেছেন।অন্য দলের মানুষ তো কথা বলতেই পারেনি।তার কোনো সমালোচনা করলে হয় গুম খুন না হয় কারাগার স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যেতো। একথায় তিনি ছিলেন দেশের মালিক আর বাকি সকলেই ছিলো কলোনির বাসিন্দা।
শেখ হাসিনা সব চেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হন ২০১৪ সালের বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। ওই সময় তিনি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের যে স্টিমরোলার চালান তা আন্তর্জাতিকভাবে তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বৈরশাসকের কুখ্যাতি এনে দিয়েছে।
২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি এতোটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েন যে তার রোষানলে পড়ে দেশের ১৪ শ’ ছাত্রজনতাকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। ছাত্রলীগের কসাই সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগকে দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন।১৪-১৬ জুলাই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে যে নারকীয় তান্ডব চালায় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত নিকৃষ্ট বর্বরতা। ওই সময় শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন,” এখন দেশে যত বিএনপি জামাত আছে, ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের খুঁজে বের করতে হবে, তাদের আগুনে নিক্ষেপ করতে হবে। হাতপা পুড়িয়ে দিতে হবে এটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বায়িত্ব। ” আমার রাজনৈতিক জীবনে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ কোনো রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকে দলের নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশ দিতে দেখিনি!
এমনি এক সময়ে ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ আগস্ট ২৪ সারা দেশের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও ক্যাডাররা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দেয় ” সারা বাংলায় খবর দে,এক দফার কবর দে”।
ওই সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হঠাৎ ঘোষণা দেন ৪ আগস্ট দেশের সকল জেলা মহানগরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গণ অবস্থান । ওবায়দুল কাদের সাহেবের এই ঘোষণা দেওয়ার পর ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ক্যাডারা আরও ভালো পদ পাওয়ার আশায় দেশের বিভিন্ন জেলা সদর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে লাঠিসোঁটা দা কুড়াল আগ্নেয়াস্ত্রসহ যে যা পেয়েছে তা নিয়ে ছাত্রজনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে যা আমার নিজের চোখে দেখা । হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে নিষ্টুর নির্যাতন এমনকি কয়েকশো জনকে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ র্যাব যৌথ হামলা চালিয়ে প্রাণে হত্যা করে। আমাদের শোয়েব তো ওই ছাত্রলীগের একজন নেতা ।
আমার প্রশ্ন একজন ভালো মানুষ হিসেবে শোয়েব কী ছাত্রলীগের ওইসব কর্মসূচি বর্জন করেছিলো? এই সব অন্যায় দেখে দেশের অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আমাদের কুলাউড়ায়ও ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলো। আমাদের শোয়েব কী চছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলো?
আজ আমরা যেভাবে শোয়েবকে গ্রেফতারের নিন্দা করছি শোয়েব কী আবু সাঈদ ওয়াসিম মীর মুগ্ধ ফারহান ফাইয়াজ তাহমিদ ভুইয়ার মতো নিরীহ ছাত্রজনতাকে হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলো?
আজ যারা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সমাজে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজলে সমাধান পেয়ে যাবেন।
আরও খুঁজে দেখবেন আমি একজন ছাত্রদলের কর্মী থেকে বিএনপি নেতা হওয়ার পরও জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান হয়ে আজ আওয়ামী লীগের দোসর উপাধি পেলাম কেনো?