আব্দুল বাছিত বাচ্চু
আজ পয়েলা সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭২ সালে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সরকার গঠনের পরিবর্তে নিজে শুধু আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সরকার পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেন। ১৯৭৩ সালে দেশে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কারচুপির আশ্রয় নিয়ে একদলীয় একটি সংসদ প্রতিষ্ঠা করে। সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক সন্ত্রাস রাহাজানি লুটপাট। শেখ কামাল ও গাজী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ঢাকা পরিনত হয় নরকে। গাজী গোলাম মোস্তফা ঢাকা লেডিস ক্লাবে বিয়ের আসর থেকে মেজর ডালিমের শ্যালিকা ও স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। ব্যাংক লুট ডাকাতি ধর্ষণ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়। এমনি পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশের ৪ টি ব্যতীত সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন। বাকশাল ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। এমনি পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট ভোরে এক সামরিক অঅভ্যুত্থানে দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক সরকারের দায়িত্ব নেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে চলে ক্যু পালটা ক্যু। এমনি পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি বিল্পবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে জেল থেকে মুক্ত করে সিপাহি জনতা রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্ব দেয়।
তিনি নিজে ইচ্ছা করে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। ৭ নভেম্বরের পর আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও নব্য সাম্রাজ্যবাদের দিক থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার বিরুদ্ধে বারবার হুমকি ও হামলা এসেছে। কিন্তু শহীদ জিয়ার ইস্পাত কঠিন নেতৃত্বেই গোটা দেশপ্রেমিক শান্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত করে এবং সমগ্র বিশ্বের সমর্থন অর্জন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে তিনি রক্ষা করেন।
দেশে রাজনীতি ছিল না, জিয়া রাজনৈতিক দলের পুনরুজ্জীবন ঘটালেন। রাজনীতিকদের জারি করা সামরিক শাসন তুলে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শন উদ্ভাবন করে তিনি জাতিকে উপহার দিলেন পরিচয় ও আদর্শের পতাকা। সময়ের দাবি মেটাতে তিনি সৃষ্টি করলেন নতুন রাজনৈতিক দল।ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্ত্বরে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি)’ নামে এই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধমে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে যে শূন্যতার সৃষ্টি করা হয় তা পুরনে ইতিহাসের দাবী, দেশবাসীর আকাংখায় বিএনপির অভ্যুদয় ঘটে। বিএনপির ঘোষণাপত্রে বলা হয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য, ব্যাপক জনভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, এক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ অধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি গঠিত হয়েছে।
১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা নেতা। যিনি একদলীয় শাসনের পর একটি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের পাদ-প্রদীপের সামনে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব বিস্ময়কর ঘটনা। তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী পুরুষ। শহীদ জিয়া ছিলেন গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ। আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। তার ছিল সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি। তিনি ছিলেন ভিশনারি, এক স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনিই জাতিকে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্তভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আনতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি। দিতে চেয়েছিলেন জাতিকে সম্মান আর গৌরব।যে কারণে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
শহীদ জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। শহীদ জিয়া গণতান্ত্রিক অধিকার সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশের জনগণ একবার যদি গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার ভোগ করে; তবে তা সারা জীবন জারি রাখতে হবে। কোনো কারণে সে অধিকার হতে তারা বঞ্চিত হলে গণঅসন্তোষ দেখা দেবে, মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে, তাই তিনি সব অধিকারের বিষয়ে ছিলেন সজাগ-আস্থাবান।
তিনি জানতেন রাজনৈতিক অধিকার ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্থহীন, অর্থনৈতিক মুক্তি অবাস্তব-তাই তার ১৯ দফা কর্মসূচিকে তিনি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে রেখে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন; যাতে জনগণ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধা একসঙ্গে ভোগ করতে পারে। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য তিনি নিজে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন; তার জন্য জনগণকে কোনো দাবি বা আন্দোলন করতে হয়নি। এই জন্য তিনি দেশের মানুষের কাছে চিরকাল শ্রদ্ধাভাজন হয়ে থাকবেন।