আব্দুল বাছিত বাচ্চু
আমি তখন সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। মনু নদীর তীরবর্তী হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামে বসবাস ।সেখানের আশপাশে ৯০ শতাংশ মানুষের ঘরবাড়ি ছিলো কাঁচা এবং খড়কুটো দিয়ে তৈরী। এলাকাটি ছিলো কৃষি নির্ভর। চৈত্র বৈশাখ মাসেই অধিকাংশ মানুষের ঘরের খাবার শেষ হয়ে যেতো। এমনি পরিস্থিতিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বানিজ্য উপদেষ্টা এম সাইফুর রহমান বহির্বিশ্বের শ্রমবাজার দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা নেন। শুরু হয় জনশক্তি রফতানি। কয়েক বছরে হাজার হাজার মানুষ যেতে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শারজাহ, সৌদি আরবের মক্কা মদিনা জেদ্দা, কাতারের দোহা, কুয়েত ইরাক ইরান ওমান মালোয়েশিয়া সিঙ্গাপুর এসব দেশে যেনো একেকটা বাংলাদেশ গড়ে উঠে। এসব শ্রমজীবী প্রবাসী হাজার হাজার দিনার রিয়াল রিঙ্গিট পাঠাতে থাকেন দেশে। দেশে বৈদেশীক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে থাকে। অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তন আসে মানুষের জীবনমানে। যাদের খড়কুটোর ঘরবাড়ি ছিলো তারা দ্রুত তৈরী করতে থাকেন পাকা দালানকোঠা। হাটবাজারে ব্যবসাবাণিজ্যর প্রসার ঘটে। দেশে সৃষ্টি হয় ব্যাপক কর্মসংস্থান। এভাবে গ্রামের গরীব এবং সবসময় অভাব অনটনে থাকা মানুষগুলো দ্রুত একেকজন অর্থবৃত্তের মালিক বনে যায়। আর এসবই ঘটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিশ্বস্ত বানিজ্য উপদেষ্টা এম সাইফুর রহমানের হাত ধরে।
বাংলাদেশের এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন মেনে নিতে পারেনি দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা। ১৯৮১ সালে স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের এজেন্টদের ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আবারও বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত করার নীলনকশা প্রণয়ন করে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। এমনি পরিস্থিতিতে দেশ দ্রুত পিছিয়ে যেতে শুরু করে।দেশে শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। এমনি পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নিয়ে এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তুমুল গণ আন্দোলন গড়ে তুলেন । কিন্তু চতুর এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করে নিজের সামরিক শাসনকে বেসামরিকীকরণের উদ্যোগ নেয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ,শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বিএনপি থেকে অনেক রতি মহারতিকে দলে বাগিয়ে নেয়।এমনি পরিস্থিতিতে ১৯৮৬ সালে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করে। এসময় আওয়ামী লীগ বিএনপি বাম ডান সকলেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিএনপিকে বাইরে রেখে রাতের আঁধারে জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য দলকে নিয়ে এরাশাদের সাথে আপোষ করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে।দেওয়া হয় এরশাদের সামরিক শাসনের বৈধতা। কিন্তু থেমে যাননি বেগম খালেদা জিয়া। এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কে এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার, কর্ণেল অলি আহমদ, এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মতিন চৌধুরী, মির্জা গোলাম হাফিজ, আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া, কর্ণেল আকবর হোসেন, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সহ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যান। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর সামরিক শাসক হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নির্বাচনকালীন সরকার। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ১৪৬ টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। এম সাইফুর রহমান সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারলেও বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে প্রথম ধাপেই পূর্ণমন্ত্রী করেন। দেশ দীর্ঘ সময় গণতন্ত্রহীন থেকে যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয় সেখান থেকে টেনে তুলতে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় এম সাইফুর রহমানকে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় আমাদের এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত হলেও গড়ে উঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কাউকাপন এলাকা থেকে শমসেরনগর, টেংরা বাজার, ব্রাহ্মণবাজার, রবিরবাজার, আদমপুর বাজার আমরা পায়ে হেঁটে যেতাম। বলা যায় মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ছিলো মাটির তৈরী কাঁচা। কিন্তু এম সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এসব রাস্তাঘাট দ্রুত পাঁকাকরণ করতে থাকেন। বলা যায় দুই তিন বছরের মধ্যে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার- শ্রীমঙ্গল, টিলাগাও-রবিরবাজার, মৌলভীবাজার - শমসেরনগর এমন প্রধান সড়কগুলো পাঁকাকরণ করা হয়। এম সাইফুর রহমানের যুগান্তকারী উদ্যোগে পালটে যায় মৌলভীবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এম সাইফুর রহমানের অবদানের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। এক সময় বাংলাদেশের বাজেটে উন্নয়ন খাত পুরোটাই নির্ভর ছিলো বিভিন্ন বিদেশি দাতা সংস্থার সাহায্য আর বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর। দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার আনেন এম সাইফুর রহমান। তিনি চালু করেন মুল্যসংযোজন কর। এছাড়া মুক্ত বাজার অর্থনীতি, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটাইজেশন সহ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশের আধুনিক অর্থনীতির ওই জনক।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার উনার ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি এই মহাপুরুষকে।
লেখক : সাংবাদিক
সম্পাদক, মৌলভীবাজার নিউজ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দুল বাছিত বাচ্চু
বার্তা সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয় :
২৭ শাহ মোস্তফা রোড, মৌলভীবাজার -৩২০০
সেলফোন : ০১৭১২১৮২২৯৬ (𝐖𝐡𝐚𝐭𝐬𝐀𝐩𝐩) ০১৫৫৩৪৫৬৬৯৫
ই -মেইল : 𝐛𝐚𝐜𝐡𝐜𝐡𝐮.𝐬𝐲𝐥@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
𝐟𝐛: 𝐀𝐛𝐝𝐮𝐥 𝐁𝐚𝐬𝐢𝐭 𝐁𝐚𝐜𝐡𝐜𝐡𝐮
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত