কুলাউড়া প্রতিনিধি : বৃহত্তর সিলেটের ট্রেন যাত্রীদের চলমান আট দফা দাবি বাস্তবায়নে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রামের পরও রেল কর্তৃপক্ষ এতে কর্ণপাত করছে না।লাএ নিয়ে কুলাউড়ার সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাস খান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ৭ দিনের সময় বেধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ২৭ সেপ্টেম্বর রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার সিলেট আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের কুলাউড়া উপজেলার লংলা রেলস্টেশনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন কুলাউড়া ও লংলা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
এসময় স্থানীয় রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আনু মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক তাজুল ইসলামের পরিচালনায় সংহতি প্রকাশ করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খান। বক্তব্য রাখেন ৮ দফা দাবি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রেসক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির মনু, রাউৎগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত চৌধুরী রিপন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বারী সোহেল, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমাছ পারভেজ তালুকদার, উপজেলা প্রেসকাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ শাকিল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মহি উদ্দিন রিপন, ইউপি সদস্য গোলাপ মিয়া, পরিবহন শ্রমিক নেতা ইসলাম উদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালামত খান, সাংবাদিক এইড ডি রুবেল, ছাতাপীর স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আব্দুস শুকুর ছরকুম প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, আড়াই মাস থেকে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলনে কোন ধরনের প্রতিকার না করায় আমরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির দিকে এগোচ্ছি। সেই কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হবে।
বক্তারা আরো বলেন, রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সিলেট বিভাগের রেললাইন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ও বগির অবস্থা খুবই নাজুক। পথে পথে প্রায়ই ইঞ্জিন নষ্ট হয়। এতে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহান। সারা দেশের তুলনায় সিলেট বিভাগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ রেল বিভাগ আয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি কার্যকর উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ না করেন শুধু অবস্থান ধর্মঘট নয় গোটা সিলেট জুড়ে রেল অবরোধের ডাক দেয়া হবে।
বক্তারা আট দফা দাবি তুলে ধরে তা অবিলম্বে মেনে নিতে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালু, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েলগেজে উন্নীত করা, সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন চালু, সিলেট অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলো চালু, কুলাউড়া স্টেশনে টিকিট বরাদ্দ বাড়ানো, সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী ও পারাবত এক্সপ্রেসের আজমপুর স্টেশন-পরবর্তী যাত্রা বিরতি বন্ধ এবং সব ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন ও যাত্রী অনুপাতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন।
এলাকাবাসীর দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে কুলাউড়া জংশন রেল স্টেশনের মাস্টার রোমান আহমদ জানান, বিভিন্ন দাবিতে স্থানীয় লোকজন কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে কুলাউড়া জংশন স্টেশনসহ বিভিন্ন বন্ধ রেলস্টেশনে, সিলেট রেলস্টেশন, শ্রীমঙ্গল, ভাটেরা, টিলাগাঁও এবং সর্বশেষ লংলা রেল স্টেশনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। #